• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯

নির্বাচন

স্বজনের দোষে পুড়ছে কপাল

  • প্রকাশিত ৩০ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা আজ। সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে উপস্থিত থাকবেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ কার্যনির্বাহী সদস্যরা। সভায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তবে আজকের এই সভার দিকে তাকিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এমপি মন্ত্রীদের নির্দেশনা দিয়েছিল কেন্দ্র। কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো এমপি-মন্ত্রীর ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে তার দিকেই তাকিয়ে আছে তৃণমূল।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, এবারের সভায় ১৬টি এজেন্ডা রেখেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দিবসকেন্দ্রিক কর্মসূচি। মূলত সভায় গুরুত্ব পাবে সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সাংগঠনিক ও বিবিধ। আওয়ামী লীগের এক শীর্ষনেতা জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাদের দ্বন্দ্ব, বিশৃঙ্খলা ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয় আলোচনা করা হবে। বেশকিছু বিষয়ে মহানগর নেতাদের ওপর ক্ষিপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তাই আওয়ামী লীগের এই কার্যনির্বাহী বৈঠকে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এছাড়া মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড থানার সম্মেলন হয়েছে প্রায় দুই বছর। সেই কমিটি নিয়ে আলোচনা করা হবে। বৈঠকে ঝিনাইদাহ-১ আসনের উপ-নির্বাচনের মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

দলীয় সূত্র বলছে, ক্ষমতাসীন দলের সভায় বিএনপিসহ বিরোধীদের কর্মকাণ্ড এবং কর্মসূচির বিষয়গুলোও আলোচনায় আসতে পারে। সভায় বিশেষ দিক-নির্দেশনা দেবেন শেখ হাসিনা।

তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পারে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি। নির্দিষ্ট কিছু পরিবারের মধ্যে নেতৃত্ব না রেখে তা ছড়িয়ে দিতে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। তবে কেন্দ্রের কঠোর সিদ্ধান্ত ও বার বার সতর্কবার্তা দেওয়ার পরও প্রথম দফার উপজেলা নির্বাচনের ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বেশিরভাগ স্বজনেরা। দলের ‘সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া’ কিংবা ‘বহিষ্কারের’ মতো কঠোর পদক্ষেপের জোরালো হুমকিকে ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়ে শুধু ভোটের মাঠেই থাকেননি, বরং অনেক জায়গায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিশ্চিত করেছেন কেউ কেউ। স্থানীয় সংবাদদাতাদের তথ্যমতে, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৩ জন প্রার্থী আছেন, যারা সংসদ সদস্যদের আত্মীয়।

এই অবস্থায় কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান. উপজেলা নির্বাচনে অবাধ্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সময়মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেই আলোকে সারাদেশের দলের নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে শেষ পর্যন্ত যারা নির্বাচন করেন তাদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তা আজ তুলে দেওয়া হবে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে।

দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠছে খোদ আওয়ামী লীগের ভেতরে। নির্দেশনা আমলে না নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে স্বজন প্রার্থী হওয়ায় কপাল পুড়তে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগদলীয় এমপি ও মন্ত্রীর। সাংগঠনিক শাস্তির খড়্গ নেমে আসছে তাদের ওপর। নানাভাবেই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দলের সংশ্লিষ্ট এমপি ও মন্ত্রীকে তিরস্কার করার পাশাপাশি দলীয় পদ-পদবি কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারে জোর আলোচনা রয়েছে। এমনকি সাংগঠনিক যোগ্যতা থাকার পরও তারা নতুন করে দলের পদ-পদবি নাও পেতে পারেন। সেই সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়াটা তাদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আর অভিযুক্ত মন্ত্রী যেকোনো সময়েই মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়তে পারেন। সেই সঙ্গে তিনবার বিজয়ী এমপির মধ্যে যাদের মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা কমে আসতে পারে। অবশ্য এসব বিষয়ে এখনই দলের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে না।

দলের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম গণমাধ্যমকে জানান, মন্ত্রী ও দলের এমপির স্বজনের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। আর স্বজন বলতে মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, সহোদর ভাইবোন, ছেলে ও ছেলের স্ত্রী, মেয়ে ও মেয়ের স্বামীকেই বোঝানো হয়েছে। অন্য সম্পর্কের স্বজনের বেলায় দলের নির্দেশ কার্যকর হবে না। আর গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা মন্ত্রী এবং দলের এমপির স্বজন হলেও তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সাংগঠনিক বিধান প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে এমপি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বলে মনে করছেন তাদের বিরুদ্ধে ‘কারণ দর্শানো নোটিশ’ জারি করা হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। এরপর ‘কারণ দর্শানোর নোটিশ’-এর জবাবের প্রেক্ষাপটে তাদেরকে সতর্ক করা বা স্বজনদেরকে পদ-পদবি থেকে সরিয়ে দেওয়ার মতো পদক্ষেপগুলো নেওয়া হবে।

দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ওই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তীব্র দাবদাহের কারণে তারা কর্মসূচি স্থগিত করেন। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, রাজনীতি আবারও রাজপথে গড়াবে। এক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা কী হবে তার নির্দেশনা দেবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। আবার ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক জোট কেমনভাবে এগোবে তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে জানান দলটির নেতারা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads